প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

বাংলাদেশের গ্যাস বিদ্যুতের দাম দুর্নীতি

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ০০:২১, ২০ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৭:৪৯, ২১ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশের গ্যাস বিদ্যুতের দাম দুর্নীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুনিয়ার কোথাও এখন গ্যাস-বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভুর্তকি দেয়া হয়না। ব্যবসায়ীদের নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতে চাইলে এর দাম দিতে হবে। নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর জাতীয় সংসদে কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে এই ভুর্তকির বিষয়টিও এক ধরনের দুর্নীতি। ভুর্তকির চিন্তা ছিল গরিব মানুষকে সহায়তা। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব হলো ব্যবসায়ী-মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা। ভুর্তকির সুবিধা তারাই পায়। প্রান্তিক মানুষেরা ভুর্তকির সুবিধা পায় না। সরকার ভুর্তকি দিক বা না দিক, ব্যবসায়ী-মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা প্রান্তিক মানুষদের গলায় পাড়া দিয়ে তা আদায় করে নেয়।

এরপরও সরকারগুলো ভোটে সুবিধার আশায় ভুর্তকি দেয়। তখন মিষ্টি ভাষা ব্যবহার করে বলে, এটা দেশের মানুষের পিছনে বিনিয়োগ-সামাজিক দায়বদ্ধতা। এখন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পিছনে আইএমএফ’এর ঋনের প্রভাব আছে। বাংলাদেশ যতদিন এসব ঋন থেকে দূরে থাকতে পেরেছে নিজের মত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো সব সময় করে। আওয়ামী লীগও বিরোধীদলে থাকতে করেছে। এখন বিএনপি করছে। কিন্তু আজ বিএনপি ক্ষমতায় এলেও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমিয়ে ফেলবেনা। কারন আইএমএফ’এর মুরিদ তারাও। পীরের নির্দেশের বাইরে যাওয়া যায় না।

বাংলাদেশের মূল সমস্যা দুর্নীতি। অসততা। এত উন্নতির গল্প। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশটার কত শতাংশ মানুষ কর দেন? উন্নত বিশ্বের সরকারের রাজস্ব আয়ের বড়সূ্ত্র আয়কর। কর কেটে এরপর আয় যায় ব্যাংক একাউন্টে। এরপর আবার বছর শেষে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পর কর দেয়া টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাংক একাউন্টে ফেরতও চলে আসে।

বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের বড়সূত্র ভ্যাট জাতীয় বিক্রয়কর। এখানেও নানান কারচুপি। হয়রানি। পঞ্চাশ বছর পেরিয়েছে রাষ্ট্রের বয়স। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ না রাজনীতিতে না অর্থনীতি বা দেশ পরিচালনার কোথাও স্বচ্ছ-দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। করোনার এত বড় ধাক্কার পরও চিকিৎসা অবকাঠামো গড়ে উঠল না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও চোখ দেখাতে বিদেশ যান।

একেকটি সরকার বিদায় হবার পর দুর্নীতির সব ধারনাও পাল্টে যাচ্ছে। দুর্নীতির অর্থ কোন সরকারই উদ্ধার করতে পারেনি। অথবা চায়নি। এরশাদের জনতা টাওয়ার দুর্নীতির অভিযোগ ছিল আড়াই কোটি টাকার মত। এরজন্যে এরশাদ পাঁচবছর নির্বাচন করতে পারেননি।

কিন্তু সেই এরশাদের দেশে-বিদেশের সম্পদ কি সরকার উদ্ধার-বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে? না চেষ্টা করেছে? সেই জনতা টাওয়ারও চুপচাপ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে রওশনকে। রাজনীতির হিসাব-নিকাশে সেই এরশাদ পরে জায়েজ হয়ে গেল! সেই দেশে এখনও নূর হোসেন, ডাঃ মিলন দিবসও পালন করা হয়!

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রমানীত দুর্নীতির অভিযোগও তিন কোটি টাকার কম। কিন্তু হাওয়া ভবনের দুর্নীতির অর্থ কি উদ্ধার হয়েছে? দীর্ঘ সময় ধরে বিলাতে তারেকের পরিবারের ব্যয় বহন করছে কে? এখন শোনা যাচ্ছে লন্ডনে তারেকের বাড়িটি কেনা হয়েছে ২০০৪ সালে। হাওয়া ভবনের যুগে।

বাংলাদেশের সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে তারেকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এমনকি প্রধান কয়েকটি মিডিয়া পর্যন্ত! কারন ক্ষমতার বাইরে লন্ডনে থাকায় তারেক ফেরস্তা-সাফসুতরো হয়ে গেছেন!

অতএব দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সামনে কোন সুসংবাদ নেই। এই সরকার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছেনা তাদের সময়ে দুর্নীতি হয়নি। চোখ ধাঁধানো সব অগ্রগতি আড়াল হয়ে যাচ্ছে। একেকটি দুর্নীতি-পাচারের অভিযোগ চাউর হচ্ছে। কিন্তু সরকার এসবের জবাব দিচ্ছেনা বা দিতে পারছেনা।

ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে বিদেশে নানান বাড়ির তালিকাটি বিদেশের অভিজ্ঞতায় ষোল আনা বাস্তব নয়। বিদেশে চাইলেই যে কেউ একটা বাড়ি-সম্পত্তি কিনে ফেলতে পারেননা। এরজন্যে বৈধ আয়সূত্র অথবা কর পরিশোধিত বৈদেশিক আয় দেখাতে হয়।

ওয়াসার এমডির মূল দুর্নীতি হলো তার চাকরি। ১৯৯৫ সালে যিনি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন, এমন ব্যক্তিকে ওয়াসার এমডির চাকরি দিতে হবে, তাকে এভাবে পদে যতখুশি দিন ধরে রাখতে হবে এমন দেউলিয়া রাষ্ট্র বাংলাদেশ হয়ে যায়নি। তার ব্যাপারে জনগনের কাছে স্বচ্ছ অবস্থান নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

আব্দুস সোবহান গোলাপের ঘটনা আরেকটি কালচে দৃষ্টান্ত। শেখ হাসিনা যখন শুধু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অথবা বিরোধীদলের নেত্রী তখন কারা তার সহকর্মী অথবা কর্মচারী ছিলেন, তা শেখ হাসিনার চাইতে ভালো কেউ জানেননা। সেই শেখ হাসিনার বৈষয়িক সম্পদ কি কোথায় আছে আর এদের কার কোথায় কি আছে তা কিন্তু দিনশেষে তাঁকেই জবাবদিহি করতে হচ্ছে।

কারন শেখ হাসিনাই এই দলটিকে ক্ষমতায় এনেছেন আর ধরে রেখেছেন। আর তাঁর সেই দুঃসময়ের বিদেশ সফরের গাড়ি চালক বা কর্মচারী বা যে কেউ তাঁর ত্যাগকে পুঁজি করে ফুলেফেঁপে ওঠার দায় তিনি কেন নেবেন। কুস্টিয়ার জেলার এক নেতাকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত এনে বসিয়েছেন।

তাকে সেখান থেকে বেরও করে দিয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতার করা হয়নি। দেশেবিদেশে তার বিষয়-সম্পত্তির হিসাব নিশ্চয় একদিন বেরুবে। শুধু এসব রাজনৈতিক নেতাকর্মী নয়, দুর্নীতিবাজ সাংবাদিক থেকে শুরু করে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরপাকড় শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হতে পারে। কারন এরা সবাই মিলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অবিস্মরনীয় সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।