প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo
ক্রাচের কর্নেলের শেষযাত্রা

ক্রাচের কর্নেলের শেষযাত্রা

২০ জুলাই ১৯৭৬। কারাগারের বার্তাবাহক এসে কর্নেল তাহেরকে জানিয়ে গেল পরের দিন তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। তাহের সব শুনলেন। নিঃশঙ্ক চিত্তে ঠান্ডা মাথায় একটা ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলেন বার্তাবাহককে। তাঁর এমন শীতল প্রতিক্রিয়ায় বার্তাবাহকতো অবাক! কারন সাধারনত ফাঁসির আসামীরা এমন খবর শুনে হাউমাউ করে কাঁদে। আর ইনি কিনা ঠান্ডা মাথায় বললেন, থ্যাংকু। ধন্যবাদ। চিন্তায় পড়ে যায় বার্তাবাহক! লোকটার মাথাটাথা ঠিক আছেতো! কারাগারের নিয়ম অনুসারে একজন মৌলভী তাহেরকে তওবা পড়াতে আসেন। মৌলভী তাহেরকে বলেন জীবনে করা গুনাহ-অপরাধের কাছে আল্লাহর কাছে মাফ চান। আল্লাহ মাফ করার মালিক। কিন্তু মৌলভীকে পাত্তাই দিলেননা তাহের। কারন তিনি যা বিশ্বাস করতেন তা অকপটে বলতেন। মনে একটা মুখে একটা এমন চরিত্রের তিনি ছিলেননা। তাহের মৌলভীকে বললেন, ‘আমি নিষ্পাপ। আপনাদের সমাজের কালিমা আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কখনো না। আমি সম্পূর্ন নিষ্পাপ। আপনি এখন যান। আমি এখন ঘুমাবো’। তাঁর এমন কথায় চমকে যান মৌলভীও। কারন তাঁর কাজ হচ্ছে ফাঁসির আসামিকে তওবা পড়ানো। কিন্তু ফাঁসির এমন আসামি এর আগে তিনি কখনো পাননি-দেখেননি। মৌলভী চলে যাবার পর জনতার তাহের সত্যি সত্যি ঘুমাতে যান। এবং ডুবে যান গভীর নিদ্রায়। যে দেশের স্বাধীনতার জন্যে তিনি যুদ্ধ করেছেন সে দেশের আলো-হাওয়ায় সেটিই ছিল শেষ ঘুম, মুক্তিযুদ্ধের সাহসী বীর সেনানী তাহেরের।

খালেদা যখন বঙ্গভবনের পথে আর লুৎফা কিশোরগঞ্জের ট্রেনে
খালেদা যখন বঙ্গভবনের পথে আর লুৎফা কিশোরগঞ্জের ট্রেনে

নভেম্বরের ২০-২১ তারিখের দিকে লুৎফা শুনতে থাকেন জাসদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। ভাবলেন এই দলটির নেতাকর্মীদের জীবনে বুঝি দূর্ভোগের শেষ নেই। এর আগের সময়েও তারা সবাই সারাক্ষন দৌড়ের ওপর ছিল। এখন সেই সময় শেষেও তারা দৌড়ের ওপরই আছে। অথচ স্বাধীনতার পর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে এরা যদি আলাদা দল না করে আওয়ামী লীগে থাকতেন তাহলে এসবের কিছুই ঘটতো কী! উল্টো এরা আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতার চাইতে রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে তারা থাকতেন বেশি প্রভাবশালী। কিন্তু এরাতো ধন-দৌলতের আশায় সেদিন সেই দলগঠন করেননি। তারাই এখন আবার জিয়ার টার্গেট।

রোববার, ২৭ জুন ২০২১, ১১:০৮

তাহেরের বিপ্লব যেভাবে জানেন লুৎফা
তাহেরের বিপ্লব যেভাবে জানেন লুৎফা

রাতের খাবার খেতে খেতে খবর শুনছিলেন তাহের পরিবার। রাতের বেলা তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর চিকিৎসক মুজিবুর রহমানকে বাসায় ডাকা হয়। তিনি ওষুধ দিয়ে চলে গেলেন। ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে গেলেন তাহের। ভোরের দিকে টেলিফোনের শব্দে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। লুৎফা তাহের ফোনের রিসিভার তাহেরের হাতে ধরিয়ে দেন। তিনি বুঝতে পারেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কিন্তু কথা শেষ হতে পারলোনা। ফোনের লাইন কেটে যায়। বোঝা গেলো কেউ লাইন কেটে দিয়েছে। ফোন রেখে তাহের লুৎফাকে বললেন জিয়া তাকে বাঁচাতে মুক্ত করতে অনুরোধ করেছে। তাদের আর ঘুমানো হলোনা।

রোববার, ২৭ জুন ২০২১, ১০:৩২

ক্র্যাচের কর্নেলের বিয়ে
ক্র্যাচের কর্নেলের বিয়ে

ঈশ্বরগঞ্জ রেল স্টেশনের কাছেই তাদের বাসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকতেন লুৎফা। মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে সংগঠন করায় তখনই তাঁকে ভালো চিনতেন জানতেন মতিয়া। কর্নেল তাহেরের চাচা ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জের স্টেশন মাস্টার। ট্রেন থেকে নেমে লুৎফা মাঝে মাঝে সেই স্টেশন মাস্টার মুনসেফ উদ্দিনের বাসায়ও যেতেন। কারন স্টেশন মাস্টারের মেয়েরা তাকে খুব পছন্দ করতো। তাহেরের জন্যে কনে দেখা সেভাবেই শুরু। কনের নাম লুৎফা। পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কনে দেখতে আসেন তাহেরের ভাই আবু ইউসুফ এবং তাঁর স্ত্রী। সঙ্গিনীটা যে ভদ্রলোকের স্ত্রী এটি লুৎফা প্রথমে জানতেননা। আবু ইউসুফের প্রশ্ন করার ধরন দেখে মনে করেছিলেন পাত্রটা বুঝি ইনিই। তখন বিয়ের পাত্রীকে নানান প্রশ্ন করা হতো।

রোববার, ২৭ জুন ২০২১, ১০:০৯