প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

শেখ হাসিনার সঙ্গে আপস করে বাসায় থাকছেন খালেদা জিয়া

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ৫ নভেম্বর ২০২২

শেখ হাসিনার সঙ্গে আপস করে বাসায় থাকছেন খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে প্রতিহিংসা দেখেছেন মির্জা ফখ্রুল! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর, জেল হত্যার পর, কর্নেল তাহের সহ শতশত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার-জওয়ানদের হত্যার পর, একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা-হত্যাকান্ড লুকোতে জজ মিয়া কান্ডের পর শুধু আদর্শ দেখতেন, তাই নয় কী?

এবারে জেল হত্যা দিবসের আলোচনায় আউটবাস্ট করে শেখ হাসিনা বিএনপির উদ্দেশে বলেছিলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবেন। কথাটা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন ইস্যুর সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার বিভিন্ন বক্তৃতা-সংবাদ সম্মেলন থেকে এভাবে ইস্যুর সৃষ্টি হয়।

দেশের প্রধান রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যে প্রতিপক্ষের হাতে এমন ইস্যু তুলে দেন। সেটি নিয়ে সবাই নাচানাচি করে ক্লান্ত হয়ে গেলে আবার দেন নতুন ইস্যু। এখানে মির্জা ফখ্রুলের গোস্বা করার কোন কারন নেই। খালেদা জিয়া কারও মেহমান হিসাবে জেলখানায় যাননি।

১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে খালেদার মামলা দুটি অকাট্য তথ্য প্রমান যোগাড় করে রেখেছিল তার সঙ্গে কাজ করা সেনা গোয়েন্দা সংস্থা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও এসব নথিপত্রের খোঁজ পায়নি। ১/১১ র সামরিক লোকেরা এসব নথি বের করে মামলা দিয়েছে।

ফ্যানের সঙ্গে লটকে ঝুলিয়েছে তারেক রহমানকে। এরপর কী কারনে তারেকের মেরুদন্ডের সমস্যা দেখা দিল তা আমরা দেখিনি। একদিন শোনা গেল খালেদা জিয়ার ‘দুই রাজপুত্র’ তারেক-কোকো দু’জনেই জীবনে আর রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়াকে তখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। খালেদা বলেছিলেন, তারেক এখন অসুস্থ। তার চিকিৎসা দরকার। তার এখন রাজনীতি করার সময় নয়। ১/১১ওয়ালাদের অকাট্য প্রমানাদি দেখে খালেদা জিয়ার ‘সিংহপুরুষ সব আইনজীবীদের পরামর্শে এই মামলা দুটি যতভাবে সম্ভব বিলম্বিত করা হয়েছে।

এরপর দুই মামলায় তার জেল হয়েছে। অনেকের ধারনা ছিল খালেদার জেলে যাবার দিন ঢাকা শহরে রক্তক্ষয়ীসব ঘটনা ঘটবে। বিএনপির বীর নওজোয়ানরা ম্যাডামের জন্যে জীবন উৎসর্গ করবেন! এখন যারা তিনদিন আগে হেঁটে সাইকেলে মহাসমাবেশে চলে যাচ্ছেন, তারা নিশ্চয় তখনও বিএনপি করতেন। কিন্তু আদতে কিছুই ঘটলো না।

কোন আদালত খালেদাকে জামিন দিল না। এই ডাক্তার না ওই ডাক্তার না করতে করতে চিকিৎসা বিলম্বিত করার তার হাতগুলোও বেঁকে গেল। আগে ছিল হাঁটার সমস্যা। এখন হাতেরও। সেই দন্ডিত খালেদা জিয়া অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শর্তসাপেক্ষ অনুকম্পা কবুল করেই গুলশানের ফিরোজায় আছেন।

‘একদার আপসহীন’ খালেদা জিয়া যখন তার প্রবল প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনার শর্ত কবুল করেন, তখন কি বিএনপি বলেছে, মানিনা এভাবে বাসা’য় থাকা! শাহ মোয়াজ্জেম একবার এ নিয়ে কথা বলে বিপদে পড়েন। শাহ মোয়াজ্জেম বলেছিলেন, ‘আপসহীন ঠিক আছে, কিসের আপসহীন?

‘আপস না করলে তিনি আসলেন কি কিভাবে? আপস না করে বেরিয়ে আসলেন কি করে? সরকারের কথা শুনেই তো বের হয়ে আসলেন। আপসহীন হলে তো বলতো, আমি বের হব না।‘ শাহ মোয়াজ্জেম আরও বলেছিলেন, ‘শুনি যে খুব নাকি অসুস্থ। খুব যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে করবে’।

‘তারপরে রাজনীতি করতে হলে অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। লেখাপড়া জানা দরকার, সেটা নাই। হ্যাঁ জিয়া যখন মারা গেছেন তখন বউ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এইতো। দি অনলি কোয়ালিটি এন্ড দি অনলি ক্রিডেনশিয়াল ইজ দ্যাট শি ইজ দ্য উইডো অব জিয়াউর রহমান’।

‘এ কারনেইতো তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর সেই জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচারটা হলো না কেন। বেগম জিয়ার ভবিষ্যত আল্লাহ বলতে পারবেন, আমি কিভাবে বলবো। উনি রাজনীতি করছেনই বা কবে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রাজনীতি। লেখাপড়া না জানা একজন মহিলা’।

‘আমি তো কোন রাজনীতি দেখলা্ম না তার। আমি যতদিন দেখলাম, আমার কোন কথা সে রাখলো না। একটা রাজনৈতিক লোকের প্রথম কথা হলো, কথা রাখতে হবে।‘ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাক মন্ত্রিসভার সদস্য শাহ মোয়াজেম পরে এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এরশাদের আর কোন ভবিষ্যত না দেখে পরে বিএনপিতে যোগ দেন। এমন লোকদের বিএনপিতে কদর থাকায় স্বভাবসুলভ ঠোঁটকাটা কথাবার্তা স্বত্ত্বেও শাহ মোয়াজ্জেমের কিন্তু সমস্যা হয়নি। মিডিয়া খন্ডিত বক্তব্য প্রচার করেছে বলে খালেদা জিয়ার কাছে মাফ চেয়ে পার পেয়ে যান।

আদালতের সব পর্যায়ে ব্যর্থতার পর দলের ওপরও আশা হারিয়ে খালেদার এর বাইরে কোন চয়েজ ছিল না। ‘একদার আপসহীন নেত্রী’র ইমেজ শেষ। শর্ত মেনে আপস হয়। কোন বিপ্লব হয়না। লিখিত আপস করার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার বড়বোন সেলিনা ইসলাম নিজে।

খালেদা জিয়ার অসম্মতিতে নিশ্চয় এই আপস হয়নি। খালেদা জিয়ার বড়বোন সেলিনা ইসলাম, ভগ্নিপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম গণভবনে আবেদন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আবেদন করে চিকিৎসার জন্যে তার মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।

এখনও ছয় মাস পরপর নতুন আবেদন করে মুক্ত পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা নবায়ন করা হয়। আইএমএফ তাদের শর্ত মানলেই তারা কোন দেশকে ঋন দেয়। শর্ত না মানলে তারা ঋন দেয় না। আবার তাদের ঋনও কোন তোষা শিরনি নয়। সুদে আসলে তা আদায় করে নেয়।

এখন মির্জা ফখ্রুলরা শর্তযুক্ত আপসে তাদের ম্যাডামকে জেলখানার বদলে গুলশানের ফিরোজায় রেখে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিপ্লব করারও স্বপ্ন দেখেন? তারা রাজনীতিক, আর শেখ হাসিনা বুঝি সন্নাসিনী? শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই তাকে হত্যার চেষ্টাকারিনী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেক করেছেন।

জেলখানায় নজিরবিহীনভাবে সঙ্গে থাকতে দিয়েছিলেন গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে থাকার সময় প্রিজল সেলে না রেখে ভিভিআইপি কেবিনে রাখা হয়েছে। আর খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন!

এখন ফখ্রুলগং সবাই সুবোধ বসু! তাদের পক্ষে সব সুবোধ মজুমদার, সুবোধ মালিক, সুবোধ আলো! শেখ হাসিনার কোনটা বলা ঠিক হয়নি, এসব চট করে বলে দেয়া হচ্ছে! করা হচ্ছে প্রতিটি বক্তব্যের সুরতহাল! কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আক্রমনের সময় এরা পক্ষে দাঁড়ায়নি।

জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এদের সবাই আজ একজোট হয়েছে। কিন্তু এদের কারও হাতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনাও এদের থোরাই কেয়ার করেন। আত্মবিশ্বাসী শেখ হাসিনাই নিজের ও দলের হিমালয় সমান শক্তি। তাঁর রক্ত কখনও পরাভব মানেনা।