চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়িতে রাজাকারের বাড়ি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। এই প্রজন্মের যে ছেলেমেয়েরা কাজটি করেছে তাদেরকে অভিনন্দন। সারা বাংলাদেশ জুড়ে মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্ম এমন উদ্যোগ নেবে আশা করছি। এমন রাজাকারের বাড়ি সারাদেশে এলাকায় এলাকায় আছে।
দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছেলে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা হাম্মাম কাদের চৌধুরীর ঔদ্ধত্ত্বের একটা জবাব দেয়া দরকার ছিল। তরুন প্রজন্ম জবাবটি দিয়েছে। সিনিয়র প্রজন্ম যাতে এখন তাদের দায়িত্বটি পালন করে। এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে উদ্যোগটি আশা করছি।
বিএনপির মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাম্মাম তার যুদ্ধাপরাধী বাপকে শহীদ দাবি করেছে। হাম্মাম হুঙ্কার দিয়ে বলেছে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। হাম্মাম ধৃষ্ট হুঙ্কারটা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কারন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার যুদ্ধাপরাধী বাপের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা এর জবাব দেননি।
দিতে পারেননি। ক্ষমতার চেয়ারে বসা অবস্থায় সব জবাব চটজলদি দেয়া যায়না। চামড়া একটু মোটা রাখতে হয়। এর আগে হাম্মামরা তার যুদ্ধাপরাধী বাপের কবরে শহীদ সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল! ছাত্রলীগ সেটি গুড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপির প্রশ্রয়ে থেকে দিনে দিনে এদের ঔদ্ধত্ত্য বাড়ছে!
‘শুধিতে হইবে ঋন’! এমন আগে বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদার কবরে ‘জাতীয় বীর’, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মজলুম নেতা’, ‘শহীদ’ এসব লেখা হয়েছিল। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের কবরে লাগানো হয়েছিল ‘শহীদ’! সংগ্রাম পত্রিকায় শহীদ লেখা হয়েছিল! মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এসব ঔদ্ধত্ত্ব্য মুছে দিয়েছে।
আত্মপরিচয়ের সংকটে থাকা লোকজনকে জাতে উঠতে মাঝে মাঝে এসব পদ-পদবী লাগাতে হয়। সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করতে করতে সিদ্ধহস্ত জেনারেল জিয়াও একদিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। তার পদবী লাগানো হয়েছে, ‘শহীদ’!
যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হাম্মাম চৌধুরী শ্লোগান দিয়েছে ‘নারায়ে তকবির’! বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, হাম্মাম চৌধুরীর বক্তব্য-শ্লোগান বিএনপির নয়। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যে হাম্মাম চৌধুরীর বলেই দায় খালাস হয়ে যায় না। দায়টি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর।
কারন যুদ্ধাপরাধীর পুত্র হাম্মাম চৌধুরীকে মঞ্চে ওঠার বক্তব্য রাখার সুযোগ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দিয়েছেন। ঘৃন্য ওই বক্তব্যের জন্যে হাম্মামের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য ব্যবস্থা নিতে পারেননা। কারন তিনিও তেমন এক যুদ্ধাপরাধীর সন্তান।
তার বাপ মাহমুদুন নবী চৌধুরী তেমন একজন স্বনামখ্যাত রাজাকার। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে রমনী সরবরাহের ঘৃন্য সহযোগী শান্তি কমিটির আহবায়ক ছিলেন মাহমুদুন নবী চৌধুরী। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ির সামনেও রাজাকারের বাড়ি সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।
ঠাকুরগাঁওর মির্জা ফখরুলের বাড়ির সামনেও লাগাতে হবে রাজাকারের বাড়ি সাইনবোর্ড। মির্জা ফখরুলের বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড লাগবে দুটি। আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে ‘বাতাস ভবন’। মির্জা ফখরুল এখন ফেরেস্তা সেজেছেন! ফেরেস্তার মতো কথা বলেন!
অথচ বিএনপির ২০০১-২০০৬ মেয়াদে যখন তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলেন, তখন দেশের ওই এলাকার দুর্নীতির হেডকোয়ার্টার হওয়ায় ঢাকার হাওয়া ভবনের আদলে ফখরুলের ঠাকুরগাঁওর বাড়ির নাম তখন বাতাস ভবন হয়েছিল। ইকবাল মির্জা আপনার কি হয় ফখরুল সাহেব?
মির্জা রুহুল আমিন চখা মিয়া দেশের কোন রনাঙ্গনে বাংলাদেশের জন্যে যুদ্ধ করেছেন? মির্জা সাহেবকে এসব স্পষ্ট করে ফেরেস্তা সাজতে হবে। খেয়াল করবেন আজকাল মির্জা ফখরুল আর আমীর খসরুলের কথাবার্তায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নাম উচ্চারনে আগুন ঝরে!
কারন তাদের শরীরের যে রাজাকারের রক্ত। বাংলাদেশের অনেক আন্দোলন চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়িতে রাজাকারের বাড়ি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে যে আন্দোলন চট্টগ্রামের নতুন প্রজন্ম শুরু করেছে সে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে।
সরকারকে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের সম্পত্তি জব্দ করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স বানাতে হবে। এই আন্দোলন যাতে কেউ থামিয়ে দিতে না পারে প্রিয় প্রজন্ম। তোমাদের নেতৃত্বে হাঁটুক মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নতুন এক জয়বাংলার আন্দোলন।