প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

বিএনপির সমাবেশে সরকারি বাধা

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ২২ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৫:৫৩, ২২ অক্টোবর ২০২২

বিএনপির সমাবেশে সরকারি বাধা

বিএনপির খুলনার বিভাগীয় সমাবেশেও সরকার বাধা দিয়েছে। বাংলাদেশে সব সরকারগুলোরই এটা মুখস্ত স্বভাব। এরশাদ-খালেদা জিয়া একই কাজ করেছেন। এই সরকারও করছে। বাধা দেবার কথা সরকার মুখে অস্বীকার করলেও মানুষ তা ভালো বুঝে।

এই বাধাবাধিতে যে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও সংঘাতময় হয়, তা সরকারে বসে কম টের পাওয়া যায়। যেমন মন্ত্রীদের দ্রব্যমূল্য নিয়ে কম কথা বলা ভালো। কারন তারা বাজার করতে যান না। গেলেও দোকানদার সমীহ করে জিনিসপত্রের দাম নেয় না বা কম নেয়।

অনেকদিন পর তথ্যমন্ত্রী ভালো একটি মন্তব্য করেছেন। তথ্য সচিবের বাধ্যতামূলক অবসর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি জানেন না। সচিবের অবসরের সিদ্ধান্ত যেখান থেকে এসেছে তা মন্ত্রীর জানার কথা নয়। অনেক কিছু ভালো না জেনেও মন্ত্রী মন্তব্য করেন। এক্ষেত্রে অন্তত তা করেননি।

খুলনার সমাবেশের ছবিগুলো দেখছিলাম। মাগুরা থেকে ট্রলারে করেও আসছিলেন নেতাকর্মীরা। এতে করে তাদের ব্যয়ও বেড়েছে। এত জোশ! ছেলেগুলোর চেহারা দেখে মায়া হয়। দলের জন্য নিবেদিতপ্রান এমন স্বেচ্ছাসেবী নেতা-কর্মীর কারনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এত লোকজন পায়।

অথচ ফলাফল কী? অনেক রকম সুন্দর সব শূন্য। এরজন্যে বুঝি বাংলাদেশি একটি ছেলে অস্ট্রেলিয়ান এক রাজনীতিককে মুগ্ধ করেছিল। সিডনির কোগরা রেলস্টেশনে রাজ্যসভার এক এমপি প্রার্থী নিজে লিফলেট বিলি করছিলেন। রাজনীতির দেশের ছেলেটি তার সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়।

এক পর্যায়ে সে যখন জানতে পারে ইনি এমপি প্রার্থী, নিজে লিফলেট বিলি করছেন, তখন সে তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে লিফলেট বিলির প্রস্তাব দেয়। এতে অবাক মুগ্ধ হয়ে এমপি প্রার্থী তাকে নিয়ে তার গাড়ির কাছে যান। গাড়ি থেকে তার দলের একটি জার্সি তাকে পরিয়ে দেন। এরপর দু’জন একসঙ্গে ঘন্টাখানেক লিফলেট বিলি করেন।

ছেলেটি ছিল অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া নতুন এক বাংলাদেশি ছাত্র। তখনও কোন কাজ পায়নি। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন প্রার্থীরা এমন স্বেচ্ছেসেবক সচরাপর পান না। তিনি ছেলেটিকে প্রায় ফোন করে কুশল জানতে চান। সে ফ্রি থাকলে অমুক দিন তার সঙ্গে লিফলেট বিলি করতে যেতে পারবে কী না জানতে চান।

ছেলেটি আমার পরামর্শ চায়। ওই লোকের সঙ্গে যাবে কী না জানতে চায়। অস্ট্রেলিয়ায় আসা নতুন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমার একটি যোগাযোগ সম্পর্ক প্রায় হয়ে যায়। আমি যেতে বলি। একটা সম্পর্ক হোক। এরপর ছেলেটিকে ভোটের দিন এক কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়।

ভোটের দিন তার সঙ্গে থাকা পোলিং এজেন্টরা দুপুর ২ টা বাজার আগেই যার যার কাজে চলে যায়। ছেলেটি আমাকে বলে সে থাকবে কী না। কারন তাদের একজন লোক দরকার, কিন্তু তারা তাকে অনুরোধ করতে ইতস্তত বোধ করছে। আমি তাকে থাকতে বলি। একটা সম্পর্ক হোক। নির্বাচনে সেই প্রার্থী বিজয়ী হন। কেন্দ্রে এসে ছেলেটিকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। তাকে সহায়তার জন্যে কৃতজ্ঞতা জানান।

এদেশে নির্বাচনের রাতে প্রার্থীরা খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ডিনারে যান। ছেলেটিও সেই ডিনারের আমন্ত্রন পেয়ে আমার কাছে পরামর্শ চায়, সে যাবে কী না। আমি তাকে যেতে বলি। একটা সম্পর্ক হোক। ডিনারে তারা তাকে তাদের সঙ্গে মদ্যপানের আমন্ত্রন জানায়।

ছেলেটি এবার টেক্সট করেছে, সে পান করবে কী না। আমি তাকে ইয়েস জবাব দেই। লেটস হ্যাভ এ রিলেশনশিপ। সে পার্টিতে যাওয়া সবার সঙ্গে ছেলেটিকে সদ্য বিজয়ী এমপি পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, এই ছেলেটি বাংলাদেশ থেকে নতুন এসেছে পড়াশুনা করতে। এখনও কোন কাজ পায়নি।

সে পার্টিতে যাওয়া এক ভদ্রমহিলা পরের দিন তাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সেখানেই তার চাকরি হয়ে যায়। ছেলেটা আমাকে ফোন করে বলে, এটা কী করলেন ভাই। আপনি না বললেতো আমি এদের সঙ্গে যেতামইনা। আমি তাকে বলি পৃথিবীতে কোন সৎ পরিশ্রম বৃথা যায় না।

কিন্তু বাংলাদেশের এসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে সব ছেলেমেয়ে মিশে যায় তাদের কী মূল্যায়ন হয়? খুব কম। মারাও যায় অনেকে। আর বিএনপিতো বাংলাদেশের কোন সড় রাজনৈতিক দল নয়। নানান ভুলভ্রান্তি সহ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী আদর্শিক রাজনৈতিক দল।

আর বিএনপি হলো আওয়ামী লীগ বিরোধীদের মূল স্রোতধারা। পারিবারিক রাজনৈতিক দল। স্বামীর পর স্ত্রী। মায়ের পরে ছেলে। এই হলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন! এই ছেলের বাপ-মা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ কোন বেহেস্তে ছিল, তা এই ছেলেমেয়েরা জানেনা। শতভাগ ভোটের হ্যাঁ-না ভোট হয়েছে।

বাংলাদেশে নির্বাচন জালিয়াতির চ্যাম্পিয়ন দলটি সাধু নির্বাচনের সবক দিচ্ছে। ১৯৯১ সালে ২০০১ তারা পপুলার ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু কী কারনে দেশে ১/১১ এসেছিল তা এই প্রজন্ম জানেনা। তারা ভোট দিতে চায় এটা সত্য। কিন্তু গন্তব্য কোথায় জানেনা।

কী মধুর পরিবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিলিটারি ভাবীর ছেলেকে বিদেশ যেতে হয়েছিল তা জানেনা এই প্রজন্ম। বাংলাদেশের কোন নির্বাচনের ফলাফলকেই পরাজিত পক্ষ সুন্দর বলেনি। কেউ রামকৃষ্ণ মিশন চালায়না। ক্ষমতায় থাকা বা যাবার নিশ্চিত ব্যবস্থার নাম নির্বাচন।

আজ যারা আওয়ামী লীগকে হটাতে একজোট হয়েছে তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে যুক্ত এবং উত্তরসূরী। অবশিষ্ট হত্যাকান্ড সম্পূর্ন করতে তারা ২০০৪ সালের গ্রেনেড হত্যাকান্ড চালিয়েছে। এদের ঐক্যের নেপথ্যে এবার ডক্টর ইউনুস তথা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

তাদের আমলে বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নিষিদ্ধ নাম ছিল। আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে জাতির পিতা আবার নিষিদ্ধ হবেন তাঁর নামে স্বাধীন হওয়া দেশে। শেখ হাসিনা হত্যার শিকার হতে পারেন। আওয়ামী লীগের হাতে পুরো প্ল্যানটি চলে আসায় দলটি স্বস্তিবোধ করছে।