যুদ্ধাপরাধীর ছাওবাচ্চা আমাদের সঙ্গে নারায়ে তকবির মারাতে চায়? এসবতো আমরা ফয়সালা করেছি একাত্তরে। মুক্তিযুদ্ধে নারায়ে তকবিরওয়ালারদের হারিয়ে জয়বাংলা’কে বিজয়ী করেছি। তাই এখানে এই বাংলায় নারায়ে তকবিরের নামে আমাদের মুসলমানিত্বের পরীক্ষা নেবার অপচেষ্টায় সুবিধা করতে পারবেননা।
এখন এক যুদ্ধাপরাধীর ছাওবাচ্চার নারায়ে তকবির শ্লোগানকে অনেকের নিজেদের নতুন নতুন মুসলমান মুসলমান মনে হচ্ছে? হাদিস সংগ্রহের সেই গল্পের কথা মনে আছে? একজন তার গাধার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরন করছেন দেখে এক সাহাবী তার কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ না করে চলে আসেন।
চট্টগ্রামে বিএনপির মঞ্চে নারায়ে তকবির শ্লোগান দেনেওয়ালাও ফাঁসিতে মরা দেশের এক দাগী যুদ্ধাপরাধীর ছাওবাচ্চা। তার কাছে বাংলাদেশের মানুষকে মুসলমানিত্বের পরীক্ষা দিতে হবেনা। যুদ্ধাপরাধীর ছাওবাচ্চার নারায়ে তকবিরে যারা পুলক অনুভব করছেন, তারা বিপথগামী।
সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশের অন্যতম দাগী ও ঘৃন্য আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী। অমানুষ হিসাবে সে ছিল হিংস্র প্রকৃতির। অসম্ভব খারাপ প্রকৃতির মুখ ছিল তার। চারিত্রিক অডিও’ও প্রকাশ পেয়েছে। এমন ঘৃণ্য এক ব্যক্তির ছাওবাচ্চার নারায়ে তকবিরে দেশব্যাপী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
শুরু করেছে ঘৃনার দ্রোহ। এই ঘৃনায় বিএনপিরও ঠোঁট-মুখ পুড়বে। বাংলাদেশের শহীদ মানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শহীদ। সামরিক বাহিনীর অফিসার-জওয়ান অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর হাতেই নিহত হয়েছেন।
বিএনপি সখ করে তাকে নাম দিয়েছে শহীদ জিয়া! যুদ্ধাপরাধী ফাঁসিতে মরা সালাহ উদ্দিন চৌধুরীর ছাও’ও তার বাপকে সখ করে শহীদ নাম দিয়েছে! ‘শহীদ জিয়ার দলের গৌরব শহীদ যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী’! এসবের লেনাদেনাও হবে। আওয়ামী লীগকেও আমরা ছেড়ে কথা বলবোনা।
আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেনি। বাজেয়াপ্ত করেনি সম্পদ। নিষিদ্ধ করেনি তাদের ছাওবাচ্চাদের রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের পর সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীদের বিচার করলে তাদের বদ রক্তের উত্তরাধিকার এসব ছাওবাচ্চারও জন্ম হতোনা।
যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো ভিলেন চরিত্র পাকিস্তানের শহীদ হতে পারে। বাংলাদেশের নয়। দেশের জন্যে জীবন দেয়া শহীদদের অপমানে ধৃষ্ট উক্তি করায় তার ছাওকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারও আইন নিজের হাতে তুলে নেবার দরকার নেই।
যুদ্ধাপরাধীর ছাওবাচ্চার বক্তব্য-শ্লোগান দলীয় বক্তব্য-শ্লোগান নয় বলে বিএনপি পার পাবেনা। যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর ছাও বিএনপির সদস্য। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা তাকে ছাড়বেনা। বিএনপি নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে তারা মঞ্চে উঠতে দিয়েছে। বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়েছে।
পিঠ বাঁচাতে তাদের এসব ভনিতায় পিঠ বাঁচবেনা। রাউজানের গ্রামে গ্রামে নৃসৃংশ যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের স্মৃতি সব বধ্যভূমি রয়েছে। আমি এমন একটি বধ্যভূমি দেখেছি এক বাড়ির পুকুরপাড়ে। একদল হিন্দু গ্রামবাসীকে মেরে সেখানেই মাটিচাপা দেয়া হয়।
যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রান শহরের টর্চার সেল ছিল তাদের গুডহিলসের বাড়ি! সেই টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার চট্টগ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালে এসে সেই নির্যাতনের স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন চৌধুরী পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর তার জন্যে সুবিধাজনক সময়ে দেশে ফিরে মুসলিম লীগের একটি গ্রুপ দোকান খোলেন। একবার স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন। পরে গণআন্দোলনের উত্তাপ টের পেয়ে এরশাদ সঙ্গ ত্যাগ করেন।
তার এরশাদ সঙ্গ ত্যাগের সময় সঙ্গী ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার সাংবাদিক আনোয়ার জাহিদ । হানাদার পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে তিনি মুরগিও সরবরাহ করতেন। দুই যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী-জানোয়ার জাহিদের এরশাদ সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে পত্রিকায় তখন খবর ছাপা হয়েছিল ‘ডুবন্ত জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়লো দুইটা ইঁদুর!’
এরপর যুদ্ধাপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয় বিএনপিতে যোগ দেন যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী। বিএনপি তাকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করেছে। স্থান দিয়েছে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে। যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর খায়েশ ছিল খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি সংসদ উপনেতা হবে। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদও ছিলেন প্রার্থী।
খালেদা জিয়া তখন কাউকে দাগা না দিতে সংসদ উপনেতার পদটি খালি রাখেন। জীবিত থাকতে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী এসব অভিযোগকে থোড়াই কেয়ার করতেন। হুমকি দিয়ে বলতেন, তার গায়ে কেউ হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে! আগুন জ্বলবে চট্টগ্রামে। সবাই দেখেছে। ঘোড়ার ডিম হয়েছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক স্থায়ীভাবে কাটা পড়ে। যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী সেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বলতেন স্বাধীনতা সংগ্রামী! সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, একবার স্বাধীনতার বিপক্ষে(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ) অনেক বদনাম কুড়িয়েছি, আর আমি কারও স্বাধীনতার বিপক্ষে(ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের) বিপক্ষে দাঁড়াতে চাইনা।
ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে। সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার বক্তব্যকে ভারত সরকার সিরিয়াসলি নেয়। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে ভারতের।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া সংসদ নেত্রী হিসাবে সংসদ সামাল দিতে পারবেন কী না তা নিয়ে বিএনপি সন্দিহান ছিল। এরজন্য তারা সংসদীয় পদ্ধতিতে ফেরা নিয়ে দোদুল্যমান দেখায়। অথচ স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের তিন জোটের রূপরেখার অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল দেশ সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরবে।
বিএনপি সংসদীয় ব্যবস্থায় না ফেরার কূটকৌশল করছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ তখন হুমকি দিয়ে বলেন, সংসদীয় গনতন্ত্রে না ফিরলে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেননা। তখন বাধ্য হয়ে বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে।
খালেদা জিয়াকে সংসদীয় কার্যক্রম শেখাতে তখন একজন গৃহশিক্ষক রাখা হয়। যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী এই গৃহশিক্ষক। মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী নিজামি-মুজাহিদদকে মন্ত্রী করলেও সাকা’কে করেননি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেও যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর ফাঁসির পর একটি ইন্নালিল্লাহ বলা বা মিলাদ পড়ানোর সাহস করেনি বিএনপি। এখন যুদ্ধাপরাধীর ছাওবাচ্চার নারায়ে তকবির শ্লোগান, যুদ্ধাপরাধীকে শহীদ বলার পর বিএনপি বলেছে এসব বক্তব্য তাদের দলীয় বক্তব্য নয়। তাদের দলীয় শ্লোগান নয় নারায়ে তকবির।
কিন্তু বিএনপি যাই বলুক যুদ্ধাপরাধীর ছাও বাচ্চার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিএনপি দায় তারা এড়াতে পারেনা। এই ছাওবাচ্চার বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি দলের নেতারা মেঠো বক্তৃতায় যা বলছেন এর প্রতিফলন দেখাতে হবে আইনি উদ্যোগে।