প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

মন্দিরে হামলার পর আদিবাসী ইস্যুর চুলকানি

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১ আগস্ট ২০২২

মন্দিরে হামলার পর আদিবাসী ইস্যুর চুলকানি

সামনে দেশে নির্বাচন। এই সময়ে সমমনাদের যেখানে ঐক্যবদ্ধ করার কথা সেখানে তাদের বিভক্ত করছে শাসকদল। নড়াইলের হিন্দু বাড়ি-সম্পত্তিতে যারা হামলা করেছে তাদের শায়েস্তা করতে আন্তরিকতা কোথায়? না হামলাকারীরা ‘মুসলমান’! আদিবাসী ইস্যুতে হঠাৎ করে চুলকানি উঠলো কেনো?

নড়াইলে হিন্দু বাড়ি-সম্পত্তিতে হামলার পিছনে যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির শয়তানি যে জড়িত তা একাত্তর টিভির অনুসন্ধানী রিপোর্ট আর স্থানীয় সংসদ সদস্য মাশরাফির বক্তব্যে স্পষ্ট। ডিসি-এসপির উপস্থিতিতে সেখানে শিক্ষক স্বপন কুমারের গলায় জুতোর মালা পরানো হয়!

আর সরকার ঘটনা খতিয়ে দেখতেই আছে! ধামাচাপা দেয়ার আরেক নাম খতিয়ে দেখা! আসলে সেখানে জুতোর মালাটি পরানো হয়েছে আওয়ামী লীগের গলায়! কারন যে হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় আওয়ামী লীগ সরকার সেই হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারছেনা অথবা দিচ্ছেনা।

ভাবখানা যেন এমন নৌকায় ভোট না দিয়ে তোমরা যাবে কোথায়! আগে বিএনপি-জামায়াতের কাছে তারা ছিল মালাউনের বাচ্চা! এখন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও তাদেরকে মালাউনের বাচ্চা বলতে দেরি করেনা। এটা অন্য আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের হিন্দু-সংখ্যালঘুরা এই আওয়ামী লীগকে চেনেনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার ছবি টাইমলাইনে টাঙ্গিয়ে চললেও আজকের এসব হাইব্রিড আওয়ামী লীগার অনেকের সঙ্গে আচরনে-বিশ্বাসে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কারন বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ সম্পর্কে এরা জানেইনা। জানানোর চেষ্টাও নেই।

নতুবা আওয়ামী লীগের এতবড় সংগঠন থাকতে তাদের ভোটার হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হয় কোন সাহসে? দেশে যখনই এমন উত্তেজনা দেখা দেয় সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাহারা বসিয়েছে, হামলাকারীদের প্রতিরোধ করেছে, এমন দৃষ্টান্ত আছে কী? না সব আওয়াজ শুধু ফেসবুকে?

নড়াইলের এক আকাশ সাহা নবীকে কটাক্ষ করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে হিন্দু মন্দির-বাড়ি-সম্পত্তিতে হামলা করা হলো। গ্রেফতার করা গেলো আকাশ সাহা ও তার বাপকে। অতঃপর জানা গেলো আকাশ সাহা নামের আইডি খুলে হামলার আয়োজন করেছে এক শয়তান! আজ পর্যন্ত এ নিয়ে একটি অফিসিয়েল ব্রিফিঙ পর্যন্ত হলোনা!

একাত্তর টিভি সময় ধরে ধরে সেই হামলা বৃত্তান্ত তুলে ধরেছে। জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের উত্তেজিত করে হামলা করেছে আসরের পর। হামলাকারীরা নামাজ বাদ দিয়ে চালিয়েছে এই হামলা! হিন্দুদের বাড়ি-সম্পত্তিতে হামলা তাদের কাছে নামাজ! এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ চুপ!

এসব হামলাকারী মোল্লাদের একটা ভোট কোনদিন আওয়ামী লীগ পায়নি, আগামীতেও পাবেনা। যে হিন্দুরা ভোট দিতো তাদেরকে অনিরাপদ বিক্ষুদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে! বঙ্গবন্ধু এসব দেখে কী ভাবছেন জানিনা। তবে এটা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ না। যারা হিন্দু সহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনা তারা আওয়ামী লীগার না।

হঠাৎ করে কিছু মানুষের আদিবাসী ইস্যুতে চুলকানি উঠেছে! আদিবাসী সংখ্যালঘু যাদের ভোট আওয়ামী লীগ পায় তাদের ভোট যাতে আর না পায় সে চেষ্টা আর কী! ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে আদিবাসী আদিবাসী বলে বাকোয়াজি করা তা কী প্রত্যাহার করা হয়েছে!

‘এই দেখেন কান ধরলাম, আর কোনদিন আদিবাসী বলবোনা, চাকমা-মারমার বাচ্চারা যাতে আর আমাদের ভোট না দেয়! হঠাৎ করে রীতিমতো সরকারি প্রেসনোট জারি করে মিডিয়াকে বলা হচ্ছে কেউ যাতে আর তাদেরকে আদিবাসী না বলেন। টকশোতেও যাতে আদিবাসী বলা না হয়।

হায়রে দেশ! জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সবার সমান মর্যাদা থাকার কথা বলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। একই বানী বিলিয়ে আদায় করা হয়েছে ভারতীয়দের সমর্থন। এরপর চোখ উল্টাতে সময় লাগলোনা! এখন আমি জাতি, তুমি উপজাতি! শোনা কথা সরকারকে আদিবাসী ইস্যুতে ইউ টার্ন করিয়েছে সেনাবাহিনী!

শান্তি চুক্তিও তারা মানতে পারেনি! শান্তি চুক্তি হবার পর যখন এর প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াত সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে হরতাল করছিল তখন মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সহ নেতাদের একটি টিম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করছিল। রাঙ্গামাটি সেনানিবাসে তখন আমরা সে চেহারা দেখি!

রাজনৈতিক নেতাদের তারা বলছিলেন এই চুক্তি করা আপনাদের ঠিক হয়নি। সেই থেকে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও কারও মন নেই। যেন এটা মনের মধ্যেই ছিল! চুক্তি করলাম, কিন্তু দেবো-টেবোনা। জনসংহতি সমিতির নেতারা এভাবে প্রতারিত হন। বুড়ো নেতাদের এখন আর জঙ্গলে ফিরে যাবার বয়স নেই।

এরপর থেকে তারা বিনা নির্বাচনে বছরের পর বছর ধরে পদ-পদবী-সরকারি বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করছেন, ভাতা খাচ্ছেন! আদিবাসী ইস্যুতে সাম্প্রতিক সরকারি বিজ্ঞপ্তির পরও তাদের কোন সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ নেই। সরকারি ভাতা খেয়ে সরকারি বাড়িতে থেকে সরকারি গাড়ি চড়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লব করা যায়না।

আমরা যখন এসব নিয়ে লিখি তখন একদল এমন কিছু মন্তব্য লিখেন যেগুলো শান্তি চুক্তির বিরোধিতার সময় থেকে বলা হচ্ছে! সার কথা বাঙালিরা আদিবাসী! তর্ক চলতে থাকে কিন্তু লক প্রোফাইল আর খোলেনা! এদের একদল শেষ পর্যন্ত বলেন শুধু সাওতালরা আদিবাসী! তাহলে সাওতালদের যাদিবাসী ঘোষনা করছেননা কেনো?

এই জাত্যাভিমান থেকেই পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। বাঙালি মুসলমানদের তারা নিম্নবর্নের মুসলমান মনে করতো! আমার ভোট আমি দেবোতো নিকাল গিয়া। এখন আমার পরিচয়টাও আমাকে ঠিক করতে দেবেননা! হিন্দু-সংখ্যালঘু-আদিবাসীরা এক সময় আওয়ামী লীগকে আশ্রয় মনে করতো। এখন কৌশলে এদের সবাইকে আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে! আওয়ামী লীগের কী এখন এসব বোঝার হুশ-বুদ্ধি আর কাজ করে? না এসবের আর প্রয়োজন নেই!